Header Ads

(Why doesn't baby sleep?) কেন শিশু ঘুমায় না: সমস্যার কারণ ও সমাধান

 

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। তবে অনেক শিশু ঘুমের সমস্যায় ভুগে থাকে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। এসব শিশু স্কুলে অমনোযোগী হয়ে পড়ে, দিনে ঝিমায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে না, দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা ও স্থূলতায় ভুগে।

মানুষের ঘুমের পরিমাণ ও তীব্রতা নির্ধারণে মস্তিষ্কের ‘প্রসেস-এস’ ও রাসায়নিক পদার্থের যেমন অ্যাডিনোসিন ভূমিকা রাখে। শিশু বয়সে এসব রাসায়নিক অধিকমাত্রায় থাকে, ফলে এ বয়সের শিশুরা দিনের বেলায় বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারে না এবং ন্যাপস বা দিনের ঘুমে ঢলে পড়ে।

মস্তিষ্কের প্রসেস-সি ২৪ ঘণ্টাব্যাপী ঘুমের সময়কাল নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মগজের হাইপোথ্যালামাস অংশে অবস্থিত মাস্টার ঘড়ি এটি নিয়ন্ত্রণ করে।

বয়সভেদে ঘুম ও সমস্যা:

  • নবজাতক ও প্রথম দুই মাস: নবজাতক শিশুরা ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১০ থেকে ১৯ ঘণ্টা ঘুমায়। এ বয়সে কোনো নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন গড়ে ওঠে না। পরবর্তীতে রাতে সাড়ে আট ঘণ্টা ও দিনে প্রায় ছয় ঘণ্টা ঘুমের রুটিন তৈরি হয়। বুকের দুধ খেয়ে তৃপ্ত থাকলে নবজাতকরা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা একটানা ঘুমাতে পারে।

  • ২ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশু: এই বয়সে শিশুরা সাধারণত ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমায়। ক্ষুধা, মায়ের বিচ্ছেদভীতি, ঠান্ডা আবহাওয়া, কিংবা প্রস্রাব-পায়খানায় ভিজে যাওয়ার কারণে এ বয়সের শিশুদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

  • ১ থেকে ৩ বছর বয়সী টোডলার: এ সময় শিশুরা দিনে ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমায়। ঘুমের সমস্যা হিসেবে ‘ঘুম আতঙ্ক’ দেখা দিতে পারে।

  • ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী প্রাক-স্কুল শিশু: এ বয়সে শিশুরা ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুমায়। ঘুমের সমস্যা হিসেবে স্লিপ ওয়াকিং, ঘুম আতঙ্ক, এবং হঠাৎ শ্বাসরোধ হতে পারে।

  • মধ্য শৈশব (৬-১২ বছর): ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এ সময়ে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার, যেমন টিভি বা ভিডিও গেম আসক্তি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।

  • বয়ঃসন্ধিকাল: এ বয়সে দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম দরকার। কিন্তু দেরি করে ঘুমানো, দুশ্চিন্তা, এবং প্রতিযোগিতার চাপ ঘুমের রুটিনকে প্রভাবিত করে।

শিশুর স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য কিছু করণীয়:

শিশুর স্বাস্থ্যকর ঘুম নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। গবেষণা অনুযায়ী, ৫ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশুর ঘুমের সমস্যা থাকে।

  • শিশুকে নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিনে অভ্যস্ত করতে হবে।
  • ঘুমানোর আগে তাকে শান্ত রাখতে হবে এবং দৌড়ঝাঁপ বা বেশি শারীরিক কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।
  • ঘুমানোর আগে প্রিয় খেলনা বা বই সঙ্গে দিতে পারেন, তবে কোনো বিপজ্জনক কিছু যেন না থাকে।
  • শোবার ঘরের পরিবেশ যেন শান্ত থাকে এবং আলোর পরিমাণ কমানো উচিত।
  • শিশুকে কখনোই অভুক্ত ঘুমাতে পাঠানো উচিত নয়, তবে ঘুমের আগে ভরপেট খাবারও নয়।
  • শিশু যাতে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যায় এবং ঘুম থেকে ওঠে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

এই অভ্যাসগুলো শিশুর ঘুমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে এবং তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.